শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ এবং বিজয় | বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী ( রহঃ ) এর জীবনী Part 9 - Boro Pir Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni

Boro Pir Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni

শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ এবং বিজয়

বাহজাতুল আসরার এবং কালায়েদুল জাওয়াহের গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, শায়খ ওসমান
ছায়রাফী বর্ণনা করেছেন, আমি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) হতে শ্রবণ করেছি, তিনি
বলেছেন, 'আমি দিবারাত্র অনুর্বর মরুপ্রান্তরে, বনে-জঙ্গলে এবং বিরান ও ভাঙ্গা বাড়ী-ঘরে বাস
করতাম। বাগদাদ নগরীর দিকে মােরটেই আসতাম না। শয়তানের দল অস্ত্র ধারণপূর্বক ভয়ংকর
আকৃতিতে সারিবদ্ধ অবস্থায় আগমন করত।
 
আমার প্রতি আগুন নিক্ষেপ করত এবং আমার সাথে,
যুদ্ধ করত। কিন্তু আমি নিজের মধ্যে এমন সাহস, দৃঢ়তা, বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্প প্রাপ্ত হতাম যে,
তা বর্ণনা করে বুঝান সম্ভব নয় এবং গায়েব থেকে তখন এমন আওয়াজ শুনতান, হে আবদুল
কাদের! উঠ, ময়দানে বের হয়ে এই শয়তান বাহিনীর সাথে যুদ্ধ কর। আমি তােমায় সাহায্য করব
এবং তােমাকে তােমার স্থানে অটল ও দৃঢ়পদ রাখব।
 
এরপর আমি যখন তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য উঠতাম, তখন তারা সকলে কপূরের মত
অদৃশ্য হয়ে যেত। বাগদাদের দিকে আর কখনও আসত না। তাদের মাঝে মাত্র একটি শয়তান
দাঁড়িয়ে থাকত এবং আমাকে বিভিন্ন প্রকারে ভয় প্রদর্শনপূর্বক বলত, এখান থেকে চলে যাও।
আমি সাহস করে তার চেহারার উপর এক চপেটাঘাত করতাম, তখন সে পিছনের দিকে দৌড়াইয়া
পলায়ন করত।

একদা একজন খুব কুৎসিৎ, কদাকার, কিন্তুত কিমাকার, দুর্গ্ধ
বলতে লাগল, 'আমি ইবুলিস। আপনি আমাকে ও আমার দলবলকে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম করে
দিয়েছেন। অতএব, আমি আপনার খেদমতে থাকতে ইচ্ছা করি। আমি বললাম, যা, এখান হতে
দূর হয়ে যা, তার তরফ থেকে কখনও নিশ্চিন্ত নই।' আমি এই কথা বলতেই গায়েব থেকে একটি
হাত তার মস্তকে এমন জোরে এক থাপ্পড় মারল যে, সে জমিনের মধ্যে পড়ে গেল। অতঃপর সে
আবার আমার কাছে এসে আগুনের শিখা দিয়ে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল। হঠাৎ সবুজ অ্বের
উপর আরােহী অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আমাকে একখানি তলােয়ার দিলেন, তা দেখে ইবলীস
পিছনের দিকে দ্রুতবেগে দৌঁড়াইয়া পলায়ন করল।

পুনরায় তৃতীয়বার অমি তাকে দেখলাম, এবারে সে আমার কাছে হতে অনেক দূরে বসে
কান্নাকাটি ও রােনাযারীতে মশগুল হয়ে মাথার উপর মাটি ছিটাতে ও মাখতে লাগল এবং
আক্ষেপসূচক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগল, হে আবদুল কাদের! এখন আমি তােমার তরফ
থেকে পুরাপুরি নিরাশ এবং হতাশ হয়ে পড়েছি। আমি বললাম, হে অভিশপ্ত শয়তান! দূর হয়ে
যা, আমি সব সময় তার তরফ থেকে ভীত এবং সজাগ রয়েছি। তার এ শব্দগুলিও তার শয়তানি
এবং ধোঁকাবাজী।

এরপর সে আমার চতুর্দিকে বহু জাল বিস্তার করে দিল। আমি বললাম, 'এগুলি কি?' সে
বলল, এ দুনিয়াবী ধােকা ও কুমন্ত্রণার এমন জাল, যা দ্বারা আমি তােমার মত সাধক লােকদিগকে
শিকার করে থাকি।' তখন থেকে আমি পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত এসমস্ত জাল এবং ফাদগুলি বিচ্ছিন্ন
লােক আমার কাছে এসে
নিবন্ধ করলাম। এমন কি এ তাওয়াজ্জুহের ফলে শয়তানের সমস্ত জালই
করার প্রতি মনােযে
ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

এরপর থেকে আমার উপর আমার বাতেনের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হল। তখন আমি
দেখতে পেলাম, আমার দিল নানা প্রকার জঞ্জাল ও আবিলতার দ্বারা জড়িত হয়ে রয়েছে। আমি
জিজ্ঞাসা করলাম, এসমস্ত আবিলতা কিসের? আমাকে বলা হল, 'এ সমুদয় তােমার এরাদা ও
স্বাধীন ইচ্ছা। অতঃপর আমি পূর্ণ এক বছরকাল সেই আবিলতার পী এরাদা ও ইচ্ছাসমূহের প্রতি
তাওয়াজ্জহ প্রদান করলাম। ফলে সেই আবিলতাসমূহ দূরীভূত হয়ে আমার কলব তা থেকে মুক্ত
ও পবিত্র হয়ে গেল।

তারপর আমার উপর আমার নফসের স্বরূপ প্রকাশ করে দেওয়া হল। দেখতে পেলাম,
বাসনা ও প্রবৃত্তিসমূহ সজীব রয়েছে। এর শয়তান অবাধ্যই রয়ে গিয়েছে। এর পর আবার এক বছর
কাল এর প্রতি তাওয়াজুহ প্রদান করে এর উৎথাত সাধনে মশগুল হলাম। আল্লাহপাকের ফযলে
নফসের সমুদয় ব্যাধি সমূলে ধ্বংস হয়ে গেল। সমস্ত কামনা, বাসনা ও প্রবৃত্তি মৃত ও দমিত হয়ে

গেল। এর শয়তান মুসলমান হয়ে গেল এবং এর সকল কার্যই শুধু আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য
হতে লাগল। আমি এখন নিজের অস্তিত্ব হতে সম্পূর্ণরূপে আলাদা হয়ে গেলাম; কিন্তু এর পরেও
নিজের উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারলাম না।
তারপর আমি তাওয়াক্কুল অথাৎ আল্লাহপাকের উপর নির্ভর করার দ্বারে এসে পৌছলাম।
যাহাতে এ দ্বারা লক্ষ্যস্থলে পৌছতে পারি, গ্রন্থি খুলে যায় এবং উদ্দেশ্য সফল হয়। কিন্তু দেখিলাম
কি? তাওয়াক্কুলের দরজায় খুব বড় ভিড় জমে আছে। আমি উক্ত ভিড় ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ
এরপরে আমি শােকরের দ্বারে উপনীত হলাম। এ দ্বারেও আমি এক বিরাট ভিড়ের সম্মুখীন
হলাম। আমি এ ভিড়ও ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করলাম।

তারপর আমি মুশাহাদা'র দরজায় আসলাম, এখানেও ভিড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
তারপর আমি ফকিরীর দ্বারে এসে দেখলাম, এখানে কোন ভিড় নেই। ময়দান সম্পূর্ণ খালি।
আমি এ দ্বারেও ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, যে সমস্ত বস্তুকে আমি ত্যাগ করে এসেছিলাম, উহার
সমস্তই এখানে বিদ্যমান। এখানে আমি এক অতি বিরাট রূহানী ভাণ্ডারের ফায়েয লাভ করলাম।
আত্মিক মর্যাদা বা রূহানী ইযুযত, প্রকৃত অভাবশূন্যতা ও সত্যিকারের আযাদী প্রাপ্ত হলাম। এখানে
এসে আমি নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিলাম। নিজের সমস্ত অবস্থা ও গুণাবলী বর্জন করলাম।
ফলে আমার অস্তিত্বের মধ্যে এক অন্য রকমের অবস্থা পয়দা হয়ে গেল।

উপরে উল্লেখিত অবস্থাগুলি তরীকত পন্থীর জন্য সামান্য একটু আভাস মাত্র। এতে
মারেফতের উচ্চস্তরে আরােহণের সােপানগুলি সম্পর্কে মােটামুটি ও সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এ সমস্ত স্তর ও সােপান সম্বন্ধে উপলব্ধি করা তরীকতপন্থী ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নহে।
কারণ রূহানী জগতের ধারাবাহিক সাধনার সােপানগুলি গুধুমাত্র তরীকতের পূর্ণ জ্ানী কামেল
পীরের কাছ থেকেই জানা যায়,,,
 

বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী ( রহঃ ) এর জীবনী

Post a Comment

0 Comments